• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৮-৬-২০২৩, সময়ঃ রাত ০৭:৩৮

সৈয়দপুরে সিটি ব্যাংকে আরও প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ঘাপলা, সমন্বয়ের চেষ্টা



শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►

নীলফামারীর সৈয়দপুরে সিটি ব্যাংকের এক গ্রাহকের এফডিআরের ৩৪ লাখ টাকা উধাও হওয়ার ঘটনাশ সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (১৮ জুন) একাউন্ট চেক করতে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভীড় লেগেছিল। এদিনও কয়েকজন গ্রাহকের একাউন্টে জমাকৃত টাকা শুন্য থাকায় তা সমন্বয় করা হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এছাড়াও শত শত গ্রাহক তাদের আমানত তুলে নিয়েছে।

এদিকে শাখার এই অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তে ব্যাংকের কেন্দ্র থেকে অডিটের জন্য ২ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেছেন। তারা দিনভর আগত গ্রাহকদের একাউন্ট চেক করা ও অভিযোগের ভিত্তিতে সমন্বয় ও আমানত উত্তোলনে সহযোগিতা করাসহ অন্যান্য বিষয় তদন্ত করেছেন। যা আগামী কার্যদিবসেও অব্যাহত থাকবে। জানা যায়, শহরের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী রবিবার ব্যাংকে গিয়ে তার একাউন্ট চেক করলে হিসাবে গড়মিল পান। সে অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শণ করলে দেখা যায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা ঘাপলা হয়েছে। 

একইভাবে শহরের গোলাহাট এলাকার শেফালী রানী নামে অপর এক গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকার হিসেব নেই। একই এলাকার মনোরঞ্জন নামের আরেক গ্রাহকের ১৮ লাখ টাকাও উধাও। এভাবে আরও প্রায় ৩ জন গ্রাহকের একাউন্ট শুন্য পাওয়া গেছে। 

এর ফলে ওই গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে তা গ্রহণ করেনি। শাখা ম্যানেজার তাদের দ্রুত টাকা সমন্বয় করে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গ্রাহকরা নিরবতা পালন করছেন। তবে আমানত হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রাহকদের মাঝে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রবিবার প্রায় ৪২ লাখ টাকার অনিয়মের ঘটনা এখন পর্যন্ত বেড়িয়ে এসেছে। এছাড়া প্রায় শতাধিক আমানতকারী তাদের বিভিন্ন মেয়াদী ও সঞ্চয়ী হিসাবের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। সেই সাথে সহস্বাধিক গ্রাহক আতঙ্কে তাদের একাউন্ট চেক করেছেন। শহরজুড়ে গ্রাহকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। 

একারণে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘাপলার শিকার গ্রাহকদের টাকা যেমন সমন্বয় করছেন। তেমনি আপাতত মিডিয়ার কাছে মুখ খুলতে নানাভাবে চাপে রাখছেন। এমনকি গ্রাহকদের সাথে কথা বলতে সাংবাদিকদেরও বাধা দেয়।

সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে ব্যাংকে গেলে তাদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা যাবত গেটে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে সংবাদকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে ব্যাংক ম্যানেজার সুলতান মাহবুব খান বিকাল ৫ টায় প্রবেশ করতে দিলেও তদন্তে আসা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলা বা পরিস্থিতির আলোকে কোন তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকেন। 

সাংবাদিকদের অনেক অনুরোধে শুধু জানান, ব্যাংকের হেড অফিস থেকে ইন্টারএ্যাক্ট কন্ট্রোল এন্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও রবীন্দ্র নাথ এসেছেন। তদন্ত শেষে তারা ব্রিফিং করবেন। তার আগে কিছুই বলবোনা। 

বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক বিশিষ্ট শিল্পপতি আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ভাবীর একাউন্টে বিভিন্ন সময় বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খাত থেকে আসা অর্থ জমা হয়। সেই জমাকৃত টাকার পরিমান প্রায় ১৪ লাখ। বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ সেই একাউন্টের খোজখবর নিতে এসে জানা যায় হিসেবে গড়মিল আছে। এর ফলে অভিযোগ করায় কর্তৃপক্ষ টাকাগুলো সমন্বয়ের আশ্বাস দেন।

আরেক গ্রাহক শেফালী রানী বলেন, আমারও প্রায় ১০ লাখ টাকার হিসাব পাচ্ছিনা। ব্যাংকে আসলে ম্যানেজারসহ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাই এব্যাপারে আর বেশি কিছু বলা যাচ্ছেনা। কারণ এতে যদি সমস্যা হয়। আমার কষ্টের ধন আমি পাব কি পাবনা তা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার শরিফা বেগম নামে এক গ্রাহক তার এফডিআরের ৩৪ লাখ টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন অনেক আগেই তা তুলে নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ওই শাখার এসিস্টেন্ট রিলেশনশিপ ম্যানেজার (এআরএম) এজিএম এসতেকুর ইসলাম সেতুকে পাকড়াও করে ওই গ্রাহক ও তার স্বজনরা।

পরে শাখা ম্যানেজারের রুমে সেতুকে অবরুদ্ধ করে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে ওই টাকা তসরুপের কথা। এসময় সে জানায়, এই দূর্নীতির সাথে আরও অনেকে জড়িত আছে কিন্তু তাদের নাম বলতে চায়না। এর জন্য সে নিজেকে দায়ী করে। পরে রবিবার সমন্বয় করার আশ্বাসে এবং সেতুর পরিবারের মুচলেকার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়।

সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর থেকে গত শুক্রবার ও শনিবার গ্রাহকরা চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে অতিবাহিত করেন। আজ রবিবার ব্যাংক খোলার সাথে সাথেই গ্রাহকদের ভীড় জমতে থাকে। সারাদিন গ্রাহকদের উপচেপড়া ভীড় আর অভিযোগের সমাধান দিতে এসির মাঝে ঘাম ঝরা অবস্থা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এমতাবস্থায় আজ আরও কয়েকজন গ্রাহকের আমানতের খেয়ানত হওয়ার খবরে শহরজুড়ে তোলপাড় চলছে।